সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। বাংলাদেশের গ্রীষ্মকাল মানেই হল মধুমাস। গ্রীষ্মকালে অনেক ধরনের ফলের মধ্যে কাঁঠাল অন্যতম। এটি বাংলাদেশের জাতীয় ফল হিসেবে পরিচিত। কাঁঠাল চিনেনা এমন মানুষ চেনা দুষ্কর। কাঁঠালে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ ও ক্যালরি।
এই ফলটি কাঁচা এবং পাকা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠাল সবজি হিসেবে বা মাংসের বিকল্প হিসেবে অনেকেই খেয়ে থাকে। আর পাকা ফল ও অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে। ফল খাওয়ার পাশাপাশি কাঁঠালের বীজও বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। কাঁঠালের বীজ কেউ ভর্তা করে আবার কেউবা ভাই কড়াইতে ভেজে খেতে পছন্দ করে। তাই সব দিক বিবেচনা করেই কাঁঠালকে জাতীয় ফলের খেতাব দেওয়া হয়।
সূচিপত্র: কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঁঠালের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা:
বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। এই ফল অনেক সুস্বাদু এবং রসালো। কাঁঠালের অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে। চলুন জেনে নেই কাঁঠালের কিছু পুষ্টিগুণ ।
- কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ কম থাকে বলে এই ফল খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধি হয় না।
- কাঁঠালে আছে ভিটামিন সি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করে পাশাপাশি দাঁতের মাড়িও শক্ত করে।কাঁঠাল পটাশিয়াম এর অন্যতম উৎস। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পটাশিয়াম কাজ করে।
- এতে রয়েছে ভিটামিন এ যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- কাঁঠালে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস যা ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, আলসার প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
- কাঁঠালে বিদ্যমান আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা সর্দি-কাশি রোগের আক্রমণ থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে।
- কাঁঠাল এ রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম যা হাড়ের গড়ন ও হাড় শক্তিশালী করতে ভূমিকা পালন করে।
- কাঁঠালে বিদ্যমান বিপুল পরিমাণ খনিজ যা রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- কাঁঠাল বদহজম হাঁপানি রোগের উপশম করে।
- অতিরিক্ত টেনশন এবং নার্ভাসনেস কমাতে কাঁঠাল সাহায্য করে।
- গর্ভবতী নারীরা গর্ভাবস্থায় কাঁঠাল খেলে গর্ভের সন্তানের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকে।
- এই ফলে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তস্বল্পতা দূর করে।
কাঁঠাল খাওয়ার নিয়ম:
কাঁঠাল সাধারণত কাঁচা বা পাকা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠাল তরকারি হিসেবে ব্যবহৃত হয় আর কাঁঠালের বীজও তরকারি হিসেবে চমৎকার লাগে। কাঁঠাল এ প্রচুর পরিমাণে শর্করা ও ক্যালসিয়াম থাকে। পাকা কাঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন এবং ভিটামিন এ। যেহেতু কাঁঠালের প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে তাই যারা ওজন কমাতে চান তাদের কাঁঠাল পরিমান মত খাওয়াই ভালো। যারা ডায়াবেটিস রোগী আছেন তারাও অল্প পরিমাণে খাওয়া ভালো। যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তারাও কাঁঠাল এড়িয়ে চলুন।
আরো পড়ুন: পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
পাকা কাঁঠালের উপকারিতা:
পাকা কাঠালে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যা মানব শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কাঁঠালে রয়েছে থায়ামিন রিবোফ্ল্যাবিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিংকসহ আরো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান। এইসব পুষ্টি উপাদান এর কারণে কাঁঠাল খেলে মানুষের বিভিন্ন রোগ সেরে যায়।আসুন জেনে নেওয়া যাক পাকা কাঠালের কিছু উপকারিতা-
প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে কাঁঠালে: কাঁঠাল হলো ভিটামিন খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল। এছাড়াও কাঁঠালের রয়েছে ভিটামিন সি এবং ফাইবার। গবেষণায় দেখা গেছে কাঁচা কাঁঠালের তুলনায় পাকা কাঁঠালে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ থাকে কম তাই কাঁচা কাঁঠালের তুলনায় পাকা কাঁঠাল খাওয়া বেশি উপকারী।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: কাঁঠালে গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে দেয় না। এজন্য ডায়াবেটিসে রোগীরা নিশ্চিন্তে কাঁঠাল খেতে পারে এবং এতে করে তাদের ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণ থাকবে।অ্যানিমিয়া রোধ করে: কাঁঠালের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি যা শরীরে রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। সেজন্য কাঁঠাল খেলে মহিলাদের রক্তশূন্যতা সমস্যা দূর হয়।
চোখের সমস্যায় কাঁঠাল: কাঁঠাল এ রয়েছে বিটা ক্যারোটিন যা চোখের কর্নিয়ার জন্য উপকারী।
হাড় গঠনে সাহায্য করে কাঁঠাল: কাটালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিংক ও পটাশিয়াম। এজন্য হার গঠনে সাহায্য করে।
পাকা কাঁঠালের অপকারিতা:
কাঁঠালের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কাঁঠালের কি কি অপকারিতা রয়েছে।
- কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আমিষ। এইজন্য কাঁঠাল হজম করতে প্রচুর সময় লাগে।
- প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল খেলে বদহজম হতে পারে।
- যাদের ডায়বেটিস রয়েছে তাদের পাকা কাঁঠাল খেলে ডায়াবেটিস এর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
- খালি পেটে কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা:
- কাঁঠালে যেহেতু রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ সেহেতু খালি পেটে কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা ও রয়েছে। কাঁঠাল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কাঁঠাল খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় যার ফলে সকালবেলা খালি পেটে কাঁঠাল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পাইলসের সমস্যায় কাঁঠাল অত্যন্ত উপকারী।
- কাঁঠাল খেলে কি ক্ষতি হয়:
- কাঁঠাল হলো প্রচুর শক্তির উৎস। অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে কারো কারো এলার্জির সমস্যা হতে পারে। কাঁঠালে থাকে পোলেন বা লেটেক্স যাও মানুষের শরীরে এলার্জির কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। তাই এই ধরনের এলার্জির সমস্যা যাদের আছে তাদের কাঁঠাল থেকে দূরে থাকাই ভালো।
কাঁঠাল খেলে কি ওজন বাড়ে:
কাঁঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, ভিটামিন, মিনারেল, শর্করা। যেহেতু কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ কম থাকে সেহেতু কাঁঠাল খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না।
কাঁঠালের বীজ গুণাগুণ:
একটি গবেষণায় দেখা গেছে কাঁঠালের বীজ রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমায় আরো ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়। খারাপ কোলেস্টেরল হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। আর ভালো কোলেস্টেরল শরীরের জন্য উপকারী। তাই নিয়মিত কাঁঠালের বীজ খাওয়া উচিত।
প্রিয় পাঠক, আজ আমরা এই অনুচ্ছেদে কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে লিখেছি। যেহেতু কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল তাই কাঁঠাল পছন্দ করেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। পাকা কাঁঠালের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। আশা করি আমাদের এই কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা অনুচ্ছেদটি পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন। ধন্যবাদ