খেজুর খুব পরিচিত একটি ফল যদিও এটি বাংলাদেশে বেশি উৎপাদিত হয় না। সৌদি আরব ইরাক
ইরান এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে খেজুর চাষ করা হয়। খেজুরে রয়েছে অনেক
পুষ্টিগুণ এবং ঔষধি গুণ।কুরআন এবং হাদীসে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খাবার সম্পর্কে
বলা হয়েছে যেমন: তীন, জয়তুন, দুধ, মধু এদের মধ্যে খেজুর অন্যতম।
ধর্মীয় দিক ছাড়াও খেজুরে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা। তাই আজকের
অনুচ্ছেদে আমরা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
পোস্টের সূচিপত্র: খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
ভূমিকা-খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
খেজুর মিষ্টি জাতীয় এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এর সাথে রয়েছে আরো ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম,
ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি ইত্যাদি। খেজুর তাই মানুষের প্রতিদিনের
ক্যালরি চাহিদা পূরণ করে থাকে। খেজুর খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে সাথে রয়েছে
কিছু অপকারিতা। তবে অপকারিতার চেয়ে উপকারীতা বেশি রয়েছে। চলুন তাহলে আজকের
অনুচ্ছেদে আমরা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই।
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
খেজুর মিষ্টি জাতীয় একটি পুষ্টিকর ফল। খেজুরে রয়েছে অনেক পুষ্টি গুণ। তাই
নিয়মিত খেজুর খেলে শরীরের জন্য রয়েছে অনেক উপকার। চলুন জেনে নেওয়া যাক খেজুর
খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: খেজুরে রয়েছে অনেক ধরনের ভিটামিন,
ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। এতে আরো রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ফাইবারের চাহিদা পূরণে : খেজুর রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। এ ফাইবার
শরীরের ওজন কমাতে এবং খাবার হজমে সহায়তা করে। তাই ডায়েট করার জন্য খাবার টেবিলে
অবশ্যই খেজুর রাখা জরুরি।
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে: খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
ম্যাগনেসিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে
তারা নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন।
রক্তস্বল্পতা পূরণে সহায়তা করে: খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা
শরীরের রক্তস্বল্পতা পূরণে সহায়তা করে। অধিক পরিমাণে আয়রন থাকায় নিয়মিত খেজুর
খাওয়া যেতে পারে।
চিনির বিকল্প হিসেবে: যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তারা চিনির বিকল্প
হিসেবে খেজুর রসের গুড় খেতে পারেন। তাই চিনির বিকল্প হিসেবে খেজুরও ব্যবহার হতে
পারে।
চোখ সুস্থ রাখতে: চোখ সুস্থ রাখতে খেজুর অনেকাংশে সাহায্য করে। খেজুরে
রয়েছে ভিটামিন এবং মিনারেল। পাশাপাশি খেজুরে রয়েছে জিক্সাথিন ও লিউটেন নামক
ভিটামিন যা চোখের রেটিনা কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
হার্টবিট ঠিক রাখতে সহায়তা করে: হার্টবিট ঠিক রাখতে খেজুর সহায়তা করে।
তাই যারা নরমাল হার্টবিট রাখতে চান তারা নিয়মিত খেজুর খান।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে: খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আশ। যাদের
কোষ্ঠকাঠিন্যের মত রোগ রয়েছে তারা নিয়মিত খেজুর খেলে এই রোগ দূরীভূত হয়। কারণ
খেজুরে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
খেজুর খাওয়ার নিয়ম
খেজুর খাওয়ার তেমন সুনিদৃষ্ট নিয়ম নেই। তবুও রাতের বেলা খাবার পর এবং সকালে ঘুম
থেকে উঠে খেজুর খেলে উপকার পাওয়া যায় পাওয়া যায়। সাধারণত খেজুর খেলে মানুষের
ক্ষুধা দূরীভূত হয়। তাই ক্ষুধা পেলে খাদ্য হিসেবে খেজুর খাওয়া যায়।
খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময়
আজকের এই অনুচ্ছেদে খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা
হবে। কোন সময় খেজুর খাওয়া ভালো এবং কখন খেজুর খেলে উপকার পাওয়া যাবে এই
অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
সাধারণত শুকনো খেজুর ভিজিয়ে রেখে তারপর খেলে উপকার পাওয়া যায়। খেজুর খাওয়ার
উপযুক্ত তেমন কোন সময় নেই। তবে রাতে খাওয়ার পর এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে খেজুর
খেলে উপকার পাওয়া যায়। খেজুর খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হলো। আশা
করি আপনারা এই তথ্যগুলো থেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন।
কোন খেজুরে উপকার বেশি
কোন খেজুর খেলে উপকার বেশি হবে, কোন খেজুর খেলে পুষ্টিগুণ বেশি পাওয়া যাবে সে
সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে কোন কিছু বলা নেই।আসলে সব খেজুরেই রয়েছে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি। খেজুরের বিভিন্ন
জাতের মধ্যে রয়েছে মরিয়ম, আজুয়া, কালমি, মেডজুল ইত্যাদি। সাধারণত এই সকল খেজুর
মানুষ বেশি খেয়ে থাকেন তবে পুষ্টিগুণ বিচার করলে সব খেজুরই একই পুষ্টিগুণ
সম্পন্ন।
দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত
খেজুরের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সকলের প্রায়ই জানা রয়েছে। রমজান মাস আসলে
খেজুরের কদর বহু অংশে বেড়ে যায়। তাই রমজান মাসে অনেকেই খেজুর খেয়ে থাকেন।
খেজুরে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। আঁশযুক্ত এবং কম ক্যালরি সমৃদ্ধ খাদ্য হওয়ায়
খেজুর খেলে অনেক সময় দেহের ওজন কমতে পারে।প্রতিদিন অন্তত ৪-৫ টি খেজুর খেলে
উপকার পাওয়া যায়। চার থেকে পাঁচটি খেজুর বা ১০০ গ্রাম খেজুরে রয়েছে ২৭৭
ক্যালোরি।
শুকনো খেজুর খাওয়ার নিয়ম
শুকনো খেজুর সাধারণত রাতে ভিজিয়ে সকালে খেতে হবে। এভাবে নিয়মিত খেলে স্বাস্থ্য
উপকারিতা পাওয়া যাবে। খেজুর খাওয়ার নিয়ম সাধারণত রাতে খাবারের পর এবং সকালে
ঘুম থেকে ওঠার পর খেলে উপকার পাওয়া যায়।
সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
এখন আমরা জানবো সকালে খেজুর খেলে কি কি উপকার হয় এবং কাঁচা খেজুর খেলে কি কি
উপকার পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ওখানে খেজুর খেলে কি কি উপকার পাওয়া
যায়। সকালে খেজুর খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। কেউ যদি রাত্রে খেজুর ভিজিয়ে
সকালে নিয়মিত খায় তাহলে তার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। অন্যদিকে কাঁচা খেজুর রয়েছে
অনেক পুষ্টিগুণ। কাঁচা খেজুর খেলে শরীরে পুষ্টির চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হয়।
যেহেতু খেজুরে রয়েছে ফাইবার তাই খালি পেটে সকালে খেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত
রোগ দূরীভূত হয়।
পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা
খেজুরের পুষ্টি উপকারিতা পুরুষ এবং নারী উভয়ের জন্যই রয়েছে। যেহেতু খেজুরে
রয়েছে আয়রন যা হৃদরোগ, রক্তচাপ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। গবেষকরা
বলে থাকেন নিয়মিত খেজুর খেলে মানুষের প্রাণশক্তি বৃদ্ধি করে এবং অদম্য মনোবল
তৈরি করে। নিয়মিত খেজুর খেলে পুরুষের যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতির পাশাপাশি
শুক্রানুর সংখ্যাও বৃদ্ধি করে। তাই খেজুর পুরুষদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
খেজুর ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
খেজুরে রয়েছে অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ তার মধ্যে খেজুরে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
বা ফাইবার। এ ফাইবার বা আশ কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অনেক উপকারী। তাই নিয়মিত রাত্রে
খেজুর ভিজিয়ে সকালে সেই পানিসহ খেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত রোগ থেকে মুক্তি
পাওয়া যায়। তাই যারা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত সাথে খেজুর ভিজিয়ে
রেখে সকালে খাবেন। এতে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
খেজুর খাওয়ার অপকারিতা
খেজুরের উপকারী গুণ রয়েছে অনেক। খেজুরের তেমন অপকারিতা নেই বলেই চলে। তবুও একটা
কথা বিবেচনায় রাখতে হবে যে অতিরিক্ত কোন কিছুই শরীরের জন্য ভালো নয়। তাই অধিক
পরিমাণে খেজুর খাওয়া ঠিক না।
যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা যদি বেশি খেজুর খেয়ে থাকেন তাহলে খেজুরের
অপকারিতার প্রভাব তাদের স্বাস্থ্যের উপর পড়বে। তাই ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীদের
বেশি খেজুর খাওয়া উচিত নয়। আমাদের উচিত পরিমিত পরিমাণে খেজুর খাওয়া। যেন এটি
আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব না ফেলে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা এই অনুচ্ছেদে জানলাম খেজুর কখন খেতে হয়, কিভাবে খেজুর
খেতে হয়, খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি এসব তথ্য আপনাদের
অনেক কাজে লাগবে। তাই আসুন আমরা নিয়মিত এবং পরিমিতভাবে পুষ্টিকর ফল খেজুর খাই।
এটা আমাদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে এবং শরীরের জন্য অনেক উপকারও হবে।
আরো পড়ুন: কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা